রোমািন্টক গল্প ভালোবাসার সকাল

  রোমািন্টক  গল্ল ভালোবাসার সকাল


সকালটা আজ একটু অন্যরকম। জানালার ফাঁক গলে রোদ এসে পড়েছে ঠিক প্রিয়ার মুখে। সে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো ঘরের চারপাশে। বিছানার পাশে রাখা কফির কাপটা এখনো ধোঁয়া তুলছে। ঘড়িতে বাজে সকাল ৮টা ১৫। হঠাৎই তার মনে পড়ল, আজ তাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন – এক বছর আগে, এই সকালেই।


নিউ মার্কেটের সামনের ফুটপাতের বইয়ের দোকানে প্রিয়া তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী। একটা পুরনো কবিতার বই খুঁজছিল সে। আর তখনই পেছন থেকে একটা কণ্ঠ—
“এই বইটা খুঁজছেন?”

প্রিয়া ঘুরে তাকিয়ে দেখল, লম্বা গড়ন, চোখে চশমা, হালকা দাঁড়ি, গলায় ক্যামেরা ঝোলানো এক তরুণ—পিকে। সে হাতে ধরে আছে ঠিক সেই বইটা—“সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের কবিতা”।

প্রিয়ার মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠেছিল সেদিন।
“আপনারটা তো না নিশ্চয়?”
পিকে হেসে বলেছিল, “না, এখন থেকে আপনারটাই। আপনি নিলে ভালো লাগবে।”

সেই দিনের পর থেকে কফির দোকান, বইয়ের মেলা, রবীন্দ্র সরোবর – এমন অসংখ্য জায়গায় একসাথে সময় কাটিয়েছেন তারা। কিন্তু আজকের সকালটা বিশেষ কারণ আজ তারা একসাথে নতুন জীবনের প্রথম দিন শুরু করছে।


প্রিয়া বিছানা ছেড়ে উঠল। পিকে এখনো ঘুমিয়ে। ওর মুখে এক শান্ত ভালোবাসার ছায়া। প্রিয়া একটু ঝুঁকে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু খেলো। পিকে হালকা নড়ে উঠে বলল,
“সকাল হয়েছে?”
“হ্যাঁ, সকালটা আজ খুব সুন্দর,” প্রিয়া বলল মৃদু হেসে।

পিকে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। জানালার বাইরে পাখির ডাকে চারপাশ জেগে উঠেছে। আকাশ একটুও মেঘলা নয়।
“তোমার মনে আছে, আজ কী দিন?” প্রিয়া পিছন থেকে জিজ্ঞেস করল।
পিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, “আমার প্রিয় দিন। তোমায় প্রথম স্পর্শ করেছিলাম এই সকালে।”

প্রিয়ার গাল লাল হয়ে গেল। ও একটু লাজুকভাবে বলল,
“তুমি প্রতিবারই এমন বলে আমাকে পাগল করে দাও।”


নাস্তা করতে করতে তারা গল্প করছিল। পুরনো দিনের কথা, ভালোবাসার ছোট ছোট মুহূর্ত, আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
প্রিয়া বলল,
“তুমি যদি আমার জীবনে না থাকতে, তাহলে আমি বুঝতেই পারতাম না ভালোবাসা কাকে বলে।”

পিকে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“আমি যদি না আসতাম, তবে কে জানে, তুমি হয়তো অন্য কাউকে নিয়ে এই চা খাচ্ছো!”
“চুপ করো!” প্রিয়া হাসতে হাসতে বলল।
“তোমার জায়গায় আর কাউকে আমি কখনো ভাবতেই পারি না।”

এই মুহূর্তটা যেন সময়কে থামিয়ে দিয়েছে। বাইরের পৃথিবী, দুঃখ, ব্যস্ততা—সব যেন দূরে কোথাও হারিয়ে গেছে।


নাস্তার পর পিকে বলল,
“চলো আজ একসাথে কোথাও ঘুরে আসি।”
প্রিয়া রাজি হলো। ওরা বের হয়ে গেল শহরের প্রিয় জায়গা ‘বালুঘাট’-এ।

সেখানে গিয়ে নদীর ধারে বসে তারা দুইজনে চুপচাপ বসে রইল। সময় যেন নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে—নিরব, কিন্তু গভীর।
পিকে বলল,
“জানো প্রিয়া, ভালোবাসা মানে শুধু একসাথে থাকা নয়। এটা বিশ্বাস, নির্ভরতা, আর একে অন্যকে বুঝে নেওয়া।”

প্রিয়া বলল,
“তুমি আজ এত দার্শনিক কেন?”
পিকে হেসে বলল,
“ভালোবাসার সকাল বলে কথা!”


বিকেল গড়িয়ে এলো। প্রিয়া পিকের হাত ধরল।
“তুমি থাকো পাশে, তাহলে প্রতিটি সকাল এমন ভালোবাসায় ভরে উঠবে।”

পিকে বলল,
“তুমি আমার প্রতিটি সকালের আলো, প্রতিটি রাতের স্বপ্ন।”

ওরা দুজন ফিরে আসলো নিজেদের ছোট্ট বাসায়। রান্না করল একসাথে। খেতে খেতে হঠাৎ পিকে একটা ছোট বাক্স বের করল।
“এটা তোমার জন্য,” সে বলল।

প্রিয়া বাক্সটা খুলে দেখে ভিতরে একটা ছোট্ট লকেট। তাতে খোদাই করা –
“আমার সকাল তুমি, প্রিয়া।”

প্রিয়ার চোখে জল এসে গেল। সে কিছু না বলে পিকেকে জড়িয়ে ধরল।


শেষ লাইনে লেখা থাকলো:
ভালোবাসা কোনো বিশেষ দিনে নয়, এটা প্রতিটি সকালের আলোয়, প্রতিটি চোখে চোখ রাখার মুহূর্তে, আর প্রতিটি নিঃশ্বাসে বাস করে। আজকের এই সকালটা যেমন—ভালোবাসার সকাল।


শেষ 🌸

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন